বিজেপি সাংসদের সভার পরেই তৃণমূলের দুই নেতার পরপর দুই দিন শক্তি প্রদর্শন

24th January 2021 8:50 pm বর্ধমান
বিজেপি সাংসদের সভার পরেই তৃণমূলের দুই নেতার পরপর দুই দিন শক্তি প্রদর্শন


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( জামালপুর ) :  বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁর পাল্টা এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি সভা করলো তৃণমূল। সভা পাল্টা সভা ঘিরে রবিবারও রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকলো পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চকদিঘিতে ।বিধানসভা ভোটের আগে জনসভার আয়োজনে তৃণমূল ও বিজেপি কার্যতই একে অপরেকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছে । তবে  রাজনীতির ময়দানে এখনও অস্তিত্বই জানান দিতে পারেনি সিপিএম ও কংগ্রেস । তা নিয়ে হতাশ এই দলের কর্মী ও সমর্থকরা ।  কৃষি বিলের সমর্থনে গত ২০ জানুয়ারি জামালপুরের চকদঘির মাঠে বিজেপি সভা করে ।ওই সভায় সেদিন উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁঁ । সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীর্যক  ভাষায় আক্রমণ করেন সৌমিত্র খাঁ ।   বিজেপি নেতার ওইসব মন্তব্যের জবাব দিতে  একদিন পরেই জামালপুর ব্লকের চকদিঘিতে পাল্টা জনসভা অনুষ্ঠিত হয়  ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীমন্ত রায়ের নেতৃত্বে। এর পর মাঝে থাকে একদিনের বিরতি । সৌমিত্র খাঁ যে মাঠে সভা করে গিয়েছিলেন সেই একই মাঠে রবিবার ফের সভা করে বিজেপিকে চুড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিলেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি  মেহেমুদ খান ও ব্লক  যুব সভাপতি  ভুতনাথ মালিক । জনজোয়ারে উপচে পড়া সভাস্থল থেকে এই দুই নেতা ঘোষনা করেন 
বিজেপির ’হুমকির হিসাব ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হবে’
। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য,এযেন সিঁঁড়ি ভাঙার গণিত । বিজেপির একদিনের ক্ষমতা প্রদর্শনীর জবাবে তৃণমূল দু'দিন ক্ষমতা দেখালো । তার সৌজন্যে  অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল। ২০ জানুয়ারি 
বিজেপির সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল  দুপুর  তিনটে তে। সৌমিত্র খাঁ সেদিন সভাস্থলে  পৌঁছান বিকাল ৫ টার পর । সেদিন অবশ্য সৌমিত্র সভায় তেমন লোক হয়নি ।সৌমিত্র  যখন সভায় বক্তব্য  রাখা শুরু করেন তখন  প্রায় সন্ধ্যা ৬ টা ।  ফাঁকা মাঠেই  সৌমিত্র বক্তব্য রাখেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি  বিজেপির পাল্টা যে জনসভার আয়োজন করেন তাতে বিজেপির থেকে বেশী  লোক হলেও তেমন জমেনি। ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্রীমন্ত রায় ওই দিন তার বক্তব্যে পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন জামালপুর বিধানসভায় বিজেপিকে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়বে না তৃণমূল । এর পর মাঝে থাকে একদিনের বিরতি। রবিবাসরীয় বিকেলে চকদিঘির মাঠে ফের তৃণমূলে জমজমাট জমায়েত। মাঠে থিক থিকে ভিড়।জনতা জমায়েতের লড়াইয়ে সবাইকে টেক্কা দিতে পেরে  মেহেমুদ খান এদিন কেষ্ট মণ্ডলের কায়দাতেই হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপিকে । এদিনের সভায় শতাধীক বিজেপি কর্মী গেরুয়া  শিবির ছেড়ে মেহেমেদ খানের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন । 

ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির  কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক  বলেন,“ সভায় উপস্থিতিই প্রমাণ করে দিয়েছে   জামালপুরের মানুষ মেহেমুদ খানের সঙ্গে আছে।“যদিও এদিন কৃষিবিলের বিরুদ্ধে সভা বলা হলেও তা আসলে ছিল মেহেমুদ খানের শক্তি প্রদর্শনের সভা।তাতে অবশ্য তিনি সফল।কারণ দু'দিন আগে ব্লক সভাপতি সভায় যা ভিড় হয়েছিল তাতে টেনেটুনে পাশ মার্ক হয়তো তিনি পেয়েছেন।  দুপুর দুটোর পর থেকে এদিনের মেহেমুদ খানের  সভা স্থলের  দিকে  বাসে, ট্রাক্টরে করে কর্মী সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করে।সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বিজেপির জামালপুর বিধানসভার কনভেনার  জীতেন ডকাল বলেন, “তৃণমূল নিজেদের মধ্যেই ‘টি- টোয়েন্টি’ খেলছে । সেই খেলা জামালপুরের বাসিন্দারা এখন দেখছেন। তবে  বিধানসভা নির্বাচনে  জামালপুরবাসীর ভোটে বিজেপি প্রার্থী চাম্পিয়ান হবে । “যদিও  মেহমুদ খান বলেন, কোন পাল্টা সভা নয়।রবিবার কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সভার আয়োজন করা হয়েছিল। হাজার ২৫ মানুষ সভায় যোগ দিয়ে  বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা   তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেই আছেন।  দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সভার আয়োজন করা হয়েছো । এবার জামালপুর বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জিতবেই।  উল্লেখ্য ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিক জামালপুরে জয়ী হন।তখন মেহমুদ খান ও উজ্জ্বল প্রামাণিক একসঙ্গে ছিলেন।তবে সেই সম্পর্ক বেশী দিন স্থায়ী হয় নি।বছর গড়াতেই দুই নেতার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়।২০১৬  সালের বিধানসভা ভোটে মেহমুদ খানের চরম বিরোধিতা স্বত্বেও  দল ফের উজ্জ্বল প্রামাণিককেই প্রার্থী করে ।পরিণামে ভোটে হারতো হয় উজ্জ্বল প্রামাণিককে । জয়ী হন বাম প্রার্থী সমর হাজরা ।২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন চলে আসলেও  দুই নেতার এখনও দুই মেরুতেই রয়ে আছেন । সম্পর্কের  ফাটলও  আরো দীর্ঘ হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে  এবারের বিধানসভা নির্বাচনে দল মেহেমুদ খানের মনোনিত ব্যক্তিকে প্রার্থী না করলে ফের জামালপুর বিধানসভা আশন হাতছাড়া হবে বলেই মনো করছে রাজনৈতিক মহল ।   রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন ‘ এই প্রসঙ্গে বলেন এদিন  চকদিঘিতে দলের সভা হয়েছে ।  সেই সভায় এদিন বহু মানুষের জমায়েত হয়েছিল। সেটাই  প্রমাণ করে বিজেপি নয় সাধারণ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে।তবে মেহমুদ উজ্জ্বলের দ্বন্দ্ব নিয়ে দেবু টুডু কোন মন্তব্য করতে চান নি ।  

    





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।